ইসমাইল খান টিটু :
মতলব উত্তর উপজেলার ইমামপুর পল্লীমঙ্গল উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০২ নম্বর কক্ষে গণিত শিক্ষক নওশেদ আজম (৩৫) বহিরাগতদের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা এলাকাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত রবিবার (১৮ মে ২০২৫) দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে পল্লীমঙ্গল উচ্চ বিদ্যালয়ে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ক্লাস নেওয়ার সময় হঠাৎ করে স্কুলের সাবেক ছাত্র সিয়াম (২১) ও রিয়াজ (২২) দুজনেই ইমামপুর গ্রামের সহ অজ্ঞাত ৬–৭ জন কক্ষে ঢুকে বিদ্যালয়ের শিক্ষক নওশেদ আজমকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি দিয়ে ঘাড় ধরে ধাক্কা দেয়। পাশের কক্ষের শিক্ষকরা ছুটে এসে পরিস্থিতি সামলে নওশেদ আজমকে অফিসকক্ষে সরিয়ে নেন।
বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানান, দশম শ্রেণির কিছু শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন ধরে গণিত ক্লাসে টেবিল ও ফ্লোরে শব্দ তুলে বিশৃঙ্খলা করছিল। বিষয়টি প্রধান শিক্ষককে জানালে দায়ী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়। ১৭ মে ওই ক্লাসে ছাত্র রহিদ পুনরায় গোলমালের চেষ্টা করলে শিক্ষক নওশেদ আজম তাকে দুই-টি থাপ্পড় মারেন। পরদিন সিয়ামের নেতৃত্বে হামলার সূত্রপাত সেই ঘটনাকেই কেন্দ্র করে বলে দাবি করছেন শিক্ষকরা।
ইমামপুর পল্লীমঙ্গল উচ্চ বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানান, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সেলিনা বেগমের ছেলে সিয়াম, আমাদের প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছে, আমরা যদি কোথাও সিয়ামের বিরুদ্ধে নালিশ করি তাহলে আমাদেরকে দেখে নিবে। আমরা সিয়ামের এরকম আচরনে সকল শিক্ষকগণ আতংকিত।
ভুক্তভোগী শিক্ষক নওশেদ আজম বলেন, একাধিক সতর্কতার পরও গোলমাল বন্ধ না হওয়ায় আমি কঠোর হতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু বহিরাগতদের এই হামলা শিক্ষক সমাজের নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অভিযুক্ত সাবেক শিক্ষার্থী সিয়াম বলেন, আমরা স্কুলের শিক্ষকের সাথে কোন ঝামেলা করতে যাইনি। শিক্ষক নওশেদ আজম আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে।
ইমামপুর পল্লীমঙ্গল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) সেলিনা বেগম জানান, রিয়াজ ও সিয়াম এই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র, সিয়াম আমার ছেলে ও রিয়াজ আমার আপন ভাতিজা হয়, স্কুলে এসে শিক্ষকের সাথে এরকম ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি, পাশাপাশি ওদের বিরুদ্ধে পারিবারিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম জানান, বিষয়টি সম্পর্কে আমি কিছুটা জেনেছি, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও বিদ্যালয়ের এড-হক কমিটির সভাপতি মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে আমি শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়পক্ষকে শান্ত করি। শিক্ষকরা তাৎক্ষণিক ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিলেও আলোচনার মাধ্যমে তারা ক্লাসে ফিরে যান। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধে আমরা নিরাপত্তা জোরদার ও আচরণবিধি কঠোর করব।