০৪:৪৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মতলব উত্তরে দোকান থেকে মুদি পণ্য না ক্রয় করায় প্রতিবেশীকে ব্যাপক মারধর : আটক ১

আরাফাত আল-আমিন :
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ফৈলাকান্দি গ্রামে দোকান থেকে মুদি পণ্য না ক্রয় করায় এক প্রতিবেশীকে বেধর মারপিট করেছেন এক মুদি ব্যবসায়ী। গত ১৩ মার্চ সন্ধ্যায় নাউরী বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত মোঃ সুরুজ মিয়া (৫২) বাদী হয়ে নাউরী বাজারের মুদি দোকানদার ফৈলাকান্দি গ্রামের নান্নু খন্দকারের বিরুদ্ধে মতলব উত্তর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। পরে ঘটনাস্থল থেকে অভিযুক্ত নান্নু খন্দকারকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, বিবাদী আওয়ামীলীগের রাজনীতির পাশাপাশি নাউরী বাজারে মুদিমালামালের ব্যবসা করে আসছে। বিবাদীর দোকান থেকে মালামাল ক্রয় না করায় বিবাদী সুরুজ মিয়ার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে বাদীর ক্ষতির চেস্টায় থাকে। ১৪ মার্চ শুক্রবার বাদীসহ তার ভাইদ্বয় বাড়ীতে ৫শ’ জন মানুষের খাবার ব্যবস্থার মাধ্যমে মিলাদের আয়োজন করে। উক্ত মিলাদের অনুষ্ঠানের জন্য বাদী গত বৃহস্পতিবার বিকাল ৫ ঘটিকায় নতুন বাজার থেকে মুদি মালামাল ক্রয় করতে ১০০ কেজি গরু গোস্তের অগ্রিমবাদ মূল্য ৭০ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য এখলাছপুর বাজারস্থ জনৈক ফারুকের গোস্তের দোকানের উদ্দেশ্যে রওনা হলে নাউরী বাজারে পৌছলে বিবাদীর দোকান থেকে উক্ত মুদি মালামাল ক্রয় না করাতে বাদীর প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে বাদীকে ঘটনাস্থলে আক্রমন করে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করতে থাকে। একপর্যায় বাদী গালমন্দ করতে বাধা নিষেধ করা মাত্রই বিবাদী নান্নু বাদীর প্রতি আরো বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার হাতে থাকা গ্যাস সিলিন্ডারে লোহার খালি বোতলদ্বারা বাদীর মাথায় আঘাত করে মাথায় গুরুতর ফাটা রক্তাক্ত জখম করে। সাথে সাথে তিনি মাটিতে পরিয়া গেলে, বিবাদী তাকে এলোপাথারী ভাবে কিলগুষি ও লাথি মেরে তার শরীরের বিভিন্নস্থানে নীলাফুলা জখম করে। এবং বাদীর সাথে থাকা নগদ ৭০ হাজার টাকা জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে তাকে ধাক্কা মেরে পাকা রাস্তার উপর থেকে ৭ ফুট গভীরে খালের মধ্যে ফেলে দেয়। ওই সময় বাদীর সাথে থাকা তার ব্যবহৃত ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ১টি এনড্রয়েট মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে ভাঙ্গে ক্ষতি সাধন করে। পরে বাদীর ডাক চিৎকারে আশপাশের লোকজন ও সাক্ষীগণ এসে বিবাদীকে প্রতিহত করে বাদী সুরুজ মিয়াকে প্রাণে রক্ষা করে। বিবাদী নান্নু খন্দকার হুমকি দেয় বাদীকে যেকোন সময় সুযোগমত খুন করিয়া আমার লাশ গুম করে ফেলবে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা দেন।
আহত বাদী সুরুজ মিয়া বলেন, বিবাদী নান্নু স্থানীয় আওয়ামীলীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী হিসাবে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসী লোকজন নিয়া দীর্ঘদিন এলাকায় দাঙ্গা হাঙ্গামা সহ বিভিন্ন অংকর্ম করে আসছে। বিবাদীর সহ অজ্ঞাতনামা বিবাদীদের দীর্ঘদিনের এই ধরনের কর্মকান্ডের বিষয়ে কোন লোকজন বাধা প্রদান করিলে, বিভিন্ন হুমকি ধামকি সহ মারধর করে। আমি ও আমার মেয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করি। তারপর থেকে নান্নু আমাদের সাথে শত্রুতা করে আসছে। সবশেষে গত ১৩ মার্চ আমি মিলাদের গোস্ত কিনতে এখলাছপুরের উদ্দেশ্যে রনা হলে নাউরী বাজারে নান্নু তার দোকান থেকে মুদি পণ্য কিনতে বলে। আমি তাতে সম্মতি না দেওয়ায় আমাকে গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে মাথায় আঘাত করে। আমার মারধর করে খালে ফেলে দেয়, এবং আমার সাথে থাকা মাংস কিনার ৭০ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
বাদীর মেয়ে সুমাইয়া আক্তার বলেন, আমার বাবা একজন সহজ সরল ও অসহায় লোক। আমার বাবাকে নান্নু খন্দকার মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে মাথায় গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে। হয়তো আজকে বাবার জানাযা হয়ে যেতো, আল্লাহ রক্ষা করেছেন। আমি এ ঘটনার দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি চাই।
আহত সুরুজ মিয়ার ভাই চাঁন মিয়া বলেন, আমার ভাই কেন নান্নুর দোকান থেকে মুদি মাল কিনল না, এই অপরাধে তাকে গুরুতর জখম করে মাথা ফাটিয়ে দিছে। আমার ভাইকে যে মেরেছে দ্রুত তাকে আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করতে প্রশাসনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এদিকে বিবাদী নান্নু খন্দকার বলেন, আমি দুষ্টুমির ছলে সুরুজ মিয়াকে ধাক্কা দিয়েছি, সেই সাথে তিনি রাস্তা থেকে গড়িয়ে পড়ে গেছে। এর বেশি কিছুই হয়নি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আনোয়ার ও সুমন বলেন, তাদের দুজনের তর্কের এক পর্যায়ে নান্নু গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করে। আর সুরুজ মিয়া ওই আঘাত প্রতিহত করার চেষ্টা করে এক পর্যায়ে খালে পড়ে যান, এবং মাথায় আঘাত পান।
শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন মতলব উত্তর থানার এসআই মিজানুর রহমান। এসময় আসামী নান্নু খন্দকারকে গ্রেফতার করা হয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

মতলব উত্তরে প্রায় ৫ হাজার কোরবানী পশু প্রস্তুত : দাম নিয়ে শংকায় খামারিরা

মতলব উত্তরে দোকান থেকে মুদি পণ্য না ক্রয় করায় প্রতিবেশীকে ব্যাপক মারধর : আটক ১

Update Time : ১০:০৯:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫

আরাফাত আল-আমিন :
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ফৈলাকান্দি গ্রামে দোকান থেকে মুদি পণ্য না ক্রয় করায় এক প্রতিবেশীকে বেধর মারপিট করেছেন এক মুদি ব্যবসায়ী। গত ১৩ মার্চ সন্ধ্যায় নাউরী বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত মোঃ সুরুজ মিয়া (৫২) বাদী হয়ে নাউরী বাজারের মুদি দোকানদার ফৈলাকান্দি গ্রামের নান্নু খন্দকারের বিরুদ্ধে মতলব উত্তর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। পরে ঘটনাস্থল থেকে অভিযুক্ত নান্নু খন্দকারকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, বিবাদী আওয়ামীলীগের রাজনীতির পাশাপাশি নাউরী বাজারে মুদিমালামালের ব্যবসা করে আসছে। বিবাদীর দোকান থেকে মালামাল ক্রয় না করায় বিবাদী সুরুজ মিয়ার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে বাদীর ক্ষতির চেস্টায় থাকে। ১৪ মার্চ শুক্রবার বাদীসহ তার ভাইদ্বয় বাড়ীতে ৫শ’ জন মানুষের খাবার ব্যবস্থার মাধ্যমে মিলাদের আয়োজন করে। উক্ত মিলাদের অনুষ্ঠানের জন্য বাদী গত বৃহস্পতিবার বিকাল ৫ ঘটিকায় নতুন বাজার থেকে মুদি মালামাল ক্রয় করতে ১০০ কেজি গরু গোস্তের অগ্রিমবাদ মূল্য ৭০ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য এখলাছপুর বাজারস্থ জনৈক ফারুকের গোস্তের দোকানের উদ্দেশ্যে রওনা হলে নাউরী বাজারে পৌছলে বিবাদীর দোকান থেকে উক্ত মুদি মালামাল ক্রয় না করাতে বাদীর প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে বাদীকে ঘটনাস্থলে আক্রমন করে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করতে থাকে। একপর্যায় বাদী গালমন্দ করতে বাধা নিষেধ করা মাত্রই বিবাদী নান্নু বাদীর প্রতি আরো বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার হাতে থাকা গ্যাস সিলিন্ডারে লোহার খালি বোতলদ্বারা বাদীর মাথায় আঘাত করে মাথায় গুরুতর ফাটা রক্তাক্ত জখম করে। সাথে সাথে তিনি মাটিতে পরিয়া গেলে, বিবাদী তাকে এলোপাথারী ভাবে কিলগুষি ও লাথি মেরে তার শরীরের বিভিন্নস্থানে নীলাফুলা জখম করে। এবং বাদীর সাথে থাকা নগদ ৭০ হাজার টাকা জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে তাকে ধাক্কা মেরে পাকা রাস্তার উপর থেকে ৭ ফুট গভীরে খালের মধ্যে ফেলে দেয়। ওই সময় বাদীর সাথে থাকা তার ব্যবহৃত ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ১টি এনড্রয়েট মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে ভাঙ্গে ক্ষতি সাধন করে। পরে বাদীর ডাক চিৎকারে আশপাশের লোকজন ও সাক্ষীগণ এসে বিবাদীকে প্রতিহত করে বাদী সুরুজ মিয়াকে প্রাণে রক্ষা করে। বিবাদী নান্নু খন্দকার হুমকি দেয় বাদীকে যেকোন সময় সুযোগমত খুন করিয়া আমার লাশ গুম করে ফেলবে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা দেন।
আহত বাদী সুরুজ মিয়া বলেন, বিবাদী নান্নু স্থানীয় আওয়ামীলীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী হিসাবে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসী লোকজন নিয়া দীর্ঘদিন এলাকায় দাঙ্গা হাঙ্গামা সহ বিভিন্ন অংকর্ম করে আসছে। বিবাদীর সহ অজ্ঞাতনামা বিবাদীদের দীর্ঘদিনের এই ধরনের কর্মকান্ডের বিষয়ে কোন লোকজন বাধা প্রদান করিলে, বিভিন্ন হুমকি ধামকি সহ মারধর করে। আমি ও আমার মেয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করি। তারপর থেকে নান্নু আমাদের সাথে শত্রুতা করে আসছে। সবশেষে গত ১৩ মার্চ আমি মিলাদের গোস্ত কিনতে এখলাছপুরের উদ্দেশ্যে রনা হলে নাউরী বাজারে নান্নু তার দোকান থেকে মুদি পণ্য কিনতে বলে। আমি তাতে সম্মতি না দেওয়ায় আমাকে গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে মাথায় আঘাত করে। আমার মারধর করে খালে ফেলে দেয়, এবং আমার সাথে থাকা মাংস কিনার ৭০ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
বাদীর মেয়ে সুমাইয়া আক্তার বলেন, আমার বাবা একজন সহজ সরল ও অসহায় লোক। আমার বাবাকে নান্নু খন্দকার মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে মাথায় গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে। হয়তো আজকে বাবার জানাযা হয়ে যেতো, আল্লাহ রক্ষা করেছেন। আমি এ ঘটনার দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি চাই।
আহত সুরুজ মিয়ার ভাই চাঁন মিয়া বলেন, আমার ভাই কেন নান্নুর দোকান থেকে মুদি মাল কিনল না, এই অপরাধে তাকে গুরুতর জখম করে মাথা ফাটিয়ে দিছে। আমার ভাইকে যে মেরেছে দ্রুত তাকে আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করতে প্রশাসনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এদিকে বিবাদী নান্নু খন্দকার বলেন, আমি দুষ্টুমির ছলে সুরুজ মিয়াকে ধাক্কা দিয়েছি, সেই সাথে তিনি রাস্তা থেকে গড়িয়ে পড়ে গেছে। এর বেশি কিছুই হয়নি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আনোয়ার ও সুমন বলেন, তাদের দুজনের তর্কের এক পর্যায়ে নান্নু গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করে। আর সুরুজ মিয়া ওই আঘাত প্রতিহত করার চেষ্টা করে এক পর্যায়ে খালে পড়ে যান, এবং মাথায় আঘাত পান।
শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন মতলব উত্তর থানার এসআই মিজানুর রহমান। এসময় আসামী নান্নু খন্দকারকে গ্রেফতার করা হয়।